বুদ্ধিমান যন্ত্রের উত্থান পর্ব
Last updated
Last updated
মাত্র ৩০-৪০ বছর আগেও মেশিন লার্নিং ছিল কেবলই সাইন্স ফিকশনের আকর্ষণীয় শব্দ । তৎকালীন সময়ে যন্ত্রকে বুদ্ধিমান করে তোলার কিছু তত্ত্ব থাকলেও কোনদিন যে তা বাস্তবতায় রূপ লাভ করতে পারে সেরকম বিশ্বাস অনেকেরই ছিলনা। আজকের যুগে ফেসবুক, ইউটিউবের রিকমান্ডেশন সিস্টেম, চ্যাটবট , বুদ্ধিমান রোবট, সেলফ ড্রিভেন গাড়ি বা অ্যামাজনের ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যালেক্সা সবকিছুই বুদ্ধিমান যন্ত্রের বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি, আর এগুলো আমাদের প্রতিদিনের জীবনযাত্রারই অংশে পরিনত হয়েছে।
ড্যান ব্রাউনের ‘অরিজিন’ উপন্যাসটি যারা পড়েছেন তারা হয়ত কিছুটা আঁচ পেয়ে থাকবেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দৌরাত্ম্য সম্পর্কে। ‘অরিজিন’ উপন্যাসের কাহিনী কাল্পনিক হলেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বাস্তব অগ্রগতি এখন কল্পনাকেও হার মানায়। মানব সভ্যতায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কতখানি দানবীয় গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে তা বোঝা যায় গত বছরের ব্রিটিশ পার্লামেন্টের একটি ঘটনায়। গত বছর ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লব’ বিষয়ক একটি শুনানিতে পার্লামেন্টারিয়ানদের সাথে আলোচনায় অংশগ্রহন করতে আমন্ত্রন জানানো হয় ‘পিপার’ নামের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন একটি রোবটকে। এসময় রোবট পিপার সংশ্লিষ্ট বিষয় ছাড়াও নৈতিকতা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের মত ‘মানবীয়’ বিষয়েও আলোচনায় অংশ নেয়। পার্লামেন্টারিয়ানদের এক প্রশ্নের জবাবে পিপার অবশ্য তাদের আশ্বস্ত করেছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কখনই মানবজাতির প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে দাঁড়াবে না। পিপারের এই উত্তরের উপর কতখানি আস্থা রাখা যাবে সেটি অবশ্য ভাববার বিষয়।
একসময় কম্পিউটারকে সংজ্ঞায়িত করা হত বুদ্ধিহীন একটি যন্ত্র হিসাবে, যা কিনা কেবলমাত্র মানুষের দেয়া নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করতে পারে। তবে কম্পিউটারের সেই সংজ্ঞা প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। কম্পিউটার এখন মেশিন লার্নিং ও ডীপ লার্নিং প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষের মতই বুদ্ধিমান হয়ে উঠছে। অতীতে কম্পিউটার অনেক যান্ত্রিক কাজে মানুষকে পেছনে ফেললেও ‘কগনিটিভিটি ও ক্রিয়েটিভিটির’ মত মানবীয় বিষয়গুলো ছিল কম্পিউটারের ধরা ছোঁয়ার বাইরে। সেই ধারনাও এখন বদলে যাচ্ছে, লেখালেখি বা চিত্রকর্মের মত অতিসংবেদনশীল সৃষ্টিশীল বিষয়ও এখন কম্পিউটার দখল করে নিচ্ছে।
অথচ মানুষ হলেই যে সবাই শিল্প-সাহিত্যের মত বিষয়ে সৃষ্টিশীলতা দেখাতে পারে এমনটি নয়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এখন সঙ্গীত সৃষ্টি করছে, ছবি আঁকছে, উপন্যাসও লিখছে। জাপানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা রচিত একটি উপন্যাস মৌলিক সাহিত্য হিসাবে পুরুস্কারের জন্য প্রাথমিক ভাবে নির্বাচিত হয়েছিল।
ধারনা করা হচ্ছে সামনের দিনের বেস্টসেলার বইয়ের পুরুস্কারগুলো দখল করে নিবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ভিত্তিক অ্যালগোরিদম। সম্প্রতি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দ্বারা আঁকা একটি চিত্রকর্ম ৪৩২০০০ ডলারে বিক্রিও হয়েছে, চিত্রকর্মটির নিচে মানব শিল্পির মত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ভিত্তিক অ্যালগোরিদম তার একটি স্বাক্ষরও করে দিয়েছে।
সাংবাদিকতার মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও রয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পদচারনা। ইতোমধ্যে নিউ ইয়র্ক টাইমস, এপি, রয়টার্সের মত আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সফটওয়্যারকে অটোমেটেড জার্নালিস্ট বা সাংবাদিক হিসাবে নিয়োগ দিয়েছে। জাপানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ভিত্তিক সংবাদ সংস্থা চালু হয়েছিল ২০০৮ সালেই, নতুন ধারার এই সাংবাদিকেরা মানুষের চেয়ে কোন দিকেই কম দক্ষ নয় বরং দ্রুততা এবং নির্ভুলতা মানুষের চেয়েও বেশী। চীনে ইতোমধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ভিত্তিক ভার্চুয়াল সংবাদ পাঠককে দিয়ে সংবাদ পরিবেশন করা হচ্ছে। এসব ঘটনা থেকে সহজেই বোঝা যায় আগামীর গণমাধ্যম শিল্পের গতিপথ কোন দিকে প্রবাহিত হচ্ছে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রভাব ইতোমধ্যেই কর্মবাজারে পড়া শুরু হয়ে গেছে। টেক জায়ান্ট কোম্পানি অ্যাপলের হার্ডওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ফক্সকন ইতোমধ্যে ৬০ হাজার কর্মী ছাটাই করে তার পরিবর্তে রোবটকে কর্মী হিসাবে নিয়োগ দিয়েছে। চীনের শিল্প কারখানাগুলোতে রোবটের ব্যবহার বাড়ছে আশংকাজনক ভাবে। গত বছর চীনের কারখানাগুলোতে রোবট ব্যবহারের হার বৃদ্ধি পেয়েছে ৩০.৮%। ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম’ তাদের একটি গবেষণা প্রতিবেদনে জানিয়েছে ২০২২ সালের ভেতরে রোবটের কারণে বিশ্বজুড়ে সাড়ে ৭ কোটি মানুষ চাকরি হারাবে, মানুষের জায়গা দখল করে নিবে রোবট। আরেক গবেষনা প্রতিষ্ঠান ম্যাককিনস ইন্সটিটিউট জানিয়েছে ২০৩০ সালের ভেতর বিশ্বের ৮০ কোটি চাকরি দখল করে নিবে রোবট। বুদ্ধিমত্তার প্রযুক্তি যে কেবলমাত্র চাকরি দখল করছে তা নয়, ফরচুন ম্যাগাজিনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বিশ্বের অন্তত ৫০০ টি নেতৃত্বস্থানীয় কোম্পানি তাদের নিয়োগ পক্রিয়া ছেড়ে দিয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার হাতে, অর্থাৎ যন্ত্র এখন মানুষকে নিয়োগ দিচ্ছে ! তবে অনেক বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যে শুধু মানব জাতির চাকরি হারানোর কারন হবে তা নয়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারনে নতুন পেশারও সৃষ্টি হবে। ডাটা সাইন্টিস্ট, মেশিন লার্নিং ইঞ্জিনিয়ার, আইওটি এক্সপার্টের মত বিভিন্ন পেশা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উত্থানের ফলে সৃষ্টি হবে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সবথেকে বড় বিপদ হল এই প্রযুক্তি একসময় মানুষের নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যেতে পারে, নিজেই একটি সত্ত্বা হিসাবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন একটি চ্যাটবটের প্রকল্প ঠিক একই কারনে বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছিল। ফেসবুকের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন চ্যাটবট ‘মূল প্রোগ্রামের’ বাইরে নিজ থেকে আলাদা একটি ভাষায় মেসেজ আদান প্রদান শুরু করে দিয়েছিল, যার উপর ঐ প্রকল্পের বিজ্ঞানীদের কোন নিয়ন্ত্রন ছিল না। এই ঘটনার পর ফেসবুক কর্তৃপক্ষ প্রকল্পটি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়।
চীনের সুপ্রাচীন ‘গো’ খেলায় পেশাদার কিংবদন্তী খেলোয়াড় লি সিডলকে টানা ৪ বার হারিয়েছে গুগোল ডীপ মাইন্ডের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ‘আলফা গো’। এই ঘটনা আলামত দেয় আগামী দিনে বুদ্ধিভিত্তিক বিষয়গুলোতেও মানুষকে ছাড়িয়ে যেতে পারে কম্পিউটার। মানুষ প্রযুক্তি সৃষ্টি করে তার পরিশ্রম লাঘবের জন্য। মানুষের সাথে যন্ত্রের পার্থক্যই এখানে, কিন্তু যন্ত্র ক্রমশ মানবীয় গুনাবলি অর্জন করতে শুরু করে তবে মানুষ এবং যন্ত্রের বিরোধটা এখানেই শুরু হয়।
অনেকে ধারনা করে আগামী দিনে মানুষের কাজের পরিধি কমে গিয়ে মানুষ হয়ে পরবে ক্রমশ কর্মশূন্য। বুদ্ধিমান যন্ত্রের মাধ্যমে যে বিপুল সম্পদ উপার্জিত হবে তার উপর কর ধার্য করে এবং সেই অর্থ মানবজাতির ভেতর বণ্টন করে মানব সভ্যতায় সমন্বয় করা হবে। নিষ্কর্মা যে জীবনের সম্ভাবনা আমাদের দিকে উকি দিচ্ছে তা একেবারে অমূলক নয়। সেই নিষ্কর্মা জীবন কতখানি সুখকর হবে অথবা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি আমারা কতখানি মানব কল্যাণে কাজে লাগাতে পারবো সেটাই আসল চিন্তার বিষয়।
উপরের লেখাটির আংশিক অংশ ইতোপূর্বে সি নিউজ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছে।
যন্ত্রের জন্ম
একটা সময় যন্ত্র মানেই ছিল কেবলমাত্র শারীরিক শ্রমকে লাঘব করার কৌশল। যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে শারীরিক শ্রমের সাথে বুদ্ধিবৃত্তিক শ্রমও মূল্যবান হয়ে উঠতে থাকে। মানুষ চিন্তা করতে থাকে গানিতিক সমস্যার সমাধানও কিভাবে যন্ত্রের দ্বারা করানো যায় ?
১৬৪২ সালে ফ্রেঞ্চ তরুন প্যাসকেল মাত্র ১৯ বছর বয়সে একধরনের অ্যারিথমেটিক মেশিন তৈরি করেতে সক্ষম হন , যা যোগ, বিয়োগ, গুন ও ভাগ করতে পারতো।
এরপর ১৬৭৯ সালে জার্মান গনিতবিদ লিবনিজ প্রথম বাইনারি সিস্টেমের ধারনা দেন, মূলত লিবনিজের এই ধারনা উপর ভিত্তি করেই আধুনিক কম্পিউটারের ভিত গড়ে উঠে। ১৮৩৪ সালে চার্লস ব্যাবেজ , যাকে বলা হয় আধুনিক কম্পিউটারের জনক , তিনি পাঞ্চ কার্ড ভিত্তিক একটি প্রোগ্রামেবল কম্পিউটারের ধারনা দেন। ব্যাবেজে তার এই অ্যানালেটিক্যল মেশিন বাস্তবে আলোর মুখ না দেখাতে পারলেও, তার ধারনার লজিক্যাল স্ট্রাকচারের উপর ভিত্তি করেই আধুনিক কম্পিউটারের গঠনশৈলী নির্মিত।
১৮৪২ সালে ব্যাবেজের তাত্ত্বিক মেশিনে প্রথম আলোর মুখ দেখান গনিতবিদ অ্যাডা লাভলেস, তিনিই হচ্ছেন পৃথিবীর প্রথম কম্পিউটার প্রোগ্রামার। ১৮৪৭ সালে জর্জ বুল সর্ব প্রথম বুলিয়ান অ্যালজেবরার ধারনা দেন, আজকের দিনের সকল সিপিইউ এখন পর্যন্ত বুলিয়ান সিস্টেমেই দুর্দান্ত গতিতে হিসাব করে চলছে। এই সময়ের ভেতরেই বেইজ থিওরাম , লিস্ট স্কয়ার মেথড ইত্যাদি তত্ত্বের সূত্রপাত হয়।
যন্ত্রের বুদ্ধিমত্তার ধারনা
যন্ত্র কি আসলে বুদ্ধিমান হতে পারে ? নাকি কেবলই মানুষের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করা পর্যন্তই যন্ত্রের দৌড় ?
যন্ত্রের বুদ্ধিমত্তার প্রশ্নে অ্যাালেন টিউরিং ১৯৩৬ সালে যন্ত্রের বুদ্ধিমত্তা প্রশ্নের উত্তরের জন্য টিউরিং টেস্টের ধারনা প্রদান করেন। টিউরিং তার লার্নিং মেশিন তত্ত্বে আর্টিফিশিয়াল লার্নিং এজেন্ট নিজে থেকেই শিখতে পারবে এমন ধারনা দেন। টিউরিং তত্ত্ব থেকে অনুপ্রানিত হয়েই পরবর্তীতে জেনেটিক অ্যালগরিদম তৈরি হয়।
টিউরিং এর কিছু বছর আগেই ১৯১৩ সালে এন্ড্রে মার্কভ , মার্কভ চেইন তত্ত্বের অবতারনা করেন। রিইনফোর্সমেন্ট লার্নিং এ মার্কভ ডিসিশন প্রসেস ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
মানব মস্তিস্কের প্রতিরূপ
১৯৪৩ সালে মানুষের মস্তিষ্কের নিউরনের গঠনের অনুকরন করে কৃত্রিম নিউরনের মাধ্যমে আর্টিফিশিয়াল নিউরাল নেটওয়ার্কে তৈরির চেষ্টা করেন ওয়ারেন ম্যাক ক্লাউচ এবং ওয়াল্টার পিটস। তারা মূলত ইলেকট্রিক্যাল সার্কিটের মাধ্যমে নিউরাল নেটওয়ার্কের গানিতিক মডেলকে বাস্তবায়নের চেষ্টা করেন। তাদের এই প্রচেষ্টার উপর ভিত্তি করেই ১৯৫০ সালে ডিন এডমন্ড এবং আরও একজন বিজ্ঞানী প্রথম নিউরাল নেটওয়ার্কে তৈরি করেন যা নিজ থেকেই শিখতে পারতো।
মেশিন যখন শিখতে পারে !
১৯৫২ সালে আর্থার স্যামুয়েল সরবপ্রথম একটি মেশিন লার্নিং প্রোগ্রাম তৈরি করেন যা আইবিএম কম্পিউটারের মাধ্যমে চেকার গেইম খেলতে পারতো। তিনি পরবর্তীতে ১৯৫৯ সালে মেশিন লার্নিং শব্দটির অবতারনা করেন।
১৯৫৭ সালে ফ্রাঙ্ক রোজেনব্লাট, পারসেপট্রন অ্যালগরিদমের ধারনা দেন। ১৯৬৭ সালে নিয়ারেস্ট নেইবোরস অ্যালগরিদমের মাধ্যমে প্যাটার্ন রিকগনেশনের সূচনা হয়।
১৯৭০ থেকে ১৯৮০ সালকে বলা হয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অন্ধকার যুগ। এই সময় বিভিন্ন দেশের সরকার এআই গবেষণায় বরাদ্দ তুলে নিতে থাকে, এছাড়াও অনেক গবেষক বিভিন্ন কারনে এআই থেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে থাকেন। তবে এর ভেতরেও ১৯৭৯ সালে নিওকগনিশন তত্ত্ব জন্মলাভ করে।
১৯৮২ সালে জন হপফিল্ড রিকারেন্ট নিউরাল নেটওয়ার্কের ধারনা প্রদান করেন। ১৯৮৫ সালে চার্লস রোজেনবার্গ এবং চেইরি সেজেনোয়াস্কি আর্টিফিশিয়াল নিউরাল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে নেটটক নামের একটি প্রোগ্রাম তৈরি করে যা এক সপ্তাহের ভেতর ২০ হাজার শব্দ শিখতে এবং উচ্চারন করতে সক্ষম হয়। ১৯৮৬ সালে ব্যাকপ্রোপাগেশনের সূত্রপাত ঘটে।
১৯৮৯ সালে ক্রিস্টেফার ওয়াটকিন্স কিউ-লার্নিং অ্যালগরিদমের মাধ্যমে মেশিন লার্নিং এর আরেকটি শাখা রিইনফোর্সমেন্ট লার্নিং এর নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেন।
১৯৯৫ সালে টিন কাম হো র্যান্ডম ফরেস্ট অ্যালগরিদমের ধারনা দেন। একই বছর কোরিন্না কর্টেস এবং ভ্লাদিমির ভ্যাপ্নিক সাপোর্ট ভেক্টর মেশিন অ্যালগরিদম তৈরি করেন।
১৯৯৭ সালে আইবিএম এর বুদ্ধিমান কম্পিউটার ডিপ ব্লু পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ দাবারু গ্রান্ডমাস্টার গ্যারি ক্যাসপারোভকে হারিয়ে দেয় ! একই বছর লং শর্ট টার্ম মেমোরি (এলএসটিএম) ভিত্তিক নিউরাল নেটওয়ার্ক তৈরি হয়। ১৯৯৯ সালে শিকাগো ইউনিভার্সিটি ক্যান্সার সনাক্তে ম্যামোগ্রাম প্রযুক্তিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ ঘটায়।
২০০৬ সালে জিওফ্রে হিল্টন আমাদেরকে ডীপ লার্নিং এর সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। এর ফলে ইমেজ, ভিডিও এবং অডিও প্রসেসিংএ নতুন দিগন্তের উন্মোচন হয়। একই বছর বিখ্যাত ভিডিও স্ট্রিমিং কোম্পানি নেটফ্লিক্স কাস্টমার রিকমেন্ডেশন সিস্টেম তৈরির জন্য নেটফ্লিক্স প্রাইজের ঘোষণা দেয়, নেটফ্লিক্স জানায় কেউ যদি তাদের কাস্টমারদের মুভি রেটিংস প্রেডিক্ট করতে পারে এমন অ্যালগরিদম তৈরি করতে সক্ষম হয় তাকে ১ মিলিয়ন ডলার প্রাইজ মানি দেয়া হবে। ২০০৯ সালে এটি এন্ড টি কোম্পানির একদল গবেষক এই সমস্যার সমাধান করে নেটফ্লিক্স পদক জিতে নেয় ।
২০১০ সালে কাগেলের জন্ম হয়, কাগেল বিশ্বব্যাপী ডেটা সাইন্টিস্টদের জন্য ডেটা সাইন্স নিয়ে কাজ করার নতুন ক্ষেত্র সৃষ্টি করে। ২০১২ সালে গুগোল ব্রেইন ইউটিউব ভিডিও থেকে মানুষ এবং বিড়ালের ছবি আলাদা ভাবে সনাক্ত করতে সক্ষম হয়।
২০১৪ সালে Eugen Goostman নামের একটি চ্যাটবট টিউরিং টেস্ট পাস করতে সক্ষম হয় ! একই বছর ফেসবুক ডিপফেইস নামের একটি নিউরাল নেটওয়ার্ক তৈরি করে যা অসাধারন সক্ষমতার সাথে চেহারা দেখে মানুষকে সনাক্ত করতে পারে।
২০১৫ সালে পেপাল মানি লন্ডারিং ঠেকাতে মেশিন লার্নিং প্রযুক্তিকে গোয়েন্দা হিসাবে ব্যবহার করে। ২০১৬ সালে আলফা গো , পৃথিবীর দ্বিতীয় সেরা গো প্লেয়ার লিও সিডলকে হারায় এবং ২০১৭ সালে পৃথিবীর নাম্বার ওয়ান গো প্লেয়ার কে জাই কে হারায় !
যন্ত্রের বুদ্ধিমত্তার জয়জয়কার এখন সর্বত্র। একটা সময়ে ধারনা করা হত কম্পিউটার একটি বুদ্ধিহীন যন্ত্র, এটা কেবল মানুষের দেয়া নির্দেশনা অনুযায়ী চলেতে পারে। সেই যুগের এখন সমাপ্তি ঘটেছে এখন যন্ত্র প্রতিনিয়ত আমাদের মতই বুদ্ধিমান হয়ে উঠছে।